প্রচন্ড স্মৃতিপ্রবণ করে দেয়া সেই মিউজিক ভিডিওগুলো…
ভারতীয় মুভির গান নিয়ে তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই, কিন্তু ব্যান্ডের গান নিয়ে কাউকেই খুব একটা কিছু বলতে শুনিনি কখনো। তাই অনেক দিন থেকেই ভাবছি ভারতীয় ব্যান্ডের কিছু পুরনো গান নিয়ে লিখবো। যে গানগুলোর প্রতিটা আমার কৈশোরের এক একটা টুকরো। প্রতিটি ভিডিও মানে এক একটি গল্প। এর কয়েকটা তো রীতিমতো আকাশচুম্বী জনপ্রিয় ছিলো তৎকালীন সময়ে। এতটাই যে, এই যুগের ছেলে মেয়েরাও হয়তো সেগুলোর নাম শুনে থাকবে।ভারতীয় মুভির চাইতে তাদের ব্যান্ড-মিউজিক ভিডিওগুলোই বরাবরই আমাকে অনেক বেশী টানতো। তাইতো, স্কুল থেকে ফিরেই টিভি ছেড়ে MTV, B4U, Music Plus আর Ch [V] নিয়ে বসতাম।
ভারতীয় মুভি এবং মিউজিক ভিডিও দেখা ছেড়েছি প্রায় ১ যুগ হতে চল্ল। কিন্তু আজও সে সব মিস করি; ভালবাসি, কেননা সেসবের সাথে আমার ছোটবেলা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। শুধু আমি নই, আমি নিশ্চিত যে, ৯০ দশকে যারা আমার মতো টিনেজার ছিলেন, তাদের অনেকেরই এই ভিডিওগুলো দেখে অনেক কিছু মনে পড়ে যাবে।
ভারতে এই ঘরানার গানগুলোকে বলে ইন্ডিপপ মানে ইন্ডিয়ান পপ। [indipop]
Euphoria আর Aryans ছিলো আমার খুব প্রিয়
দুটো ব্যান্ড। Euphoria কে বলা হয় ভারতের সবচাইতে বড় ব্যান্ড দল। তাদের
দলনেতা হলেন বাঙ্গালী ডাক্তার পলাশ সেন। এখন এরা কই আছেন, এখন আর এ্যালবাম
বের করেন কিনা কে জানে! সেদিন হঠাৎ ইউটিউবে কি যেন একটা ঘাটঁতে গিয়ে Aryans
এর পুরনো কিছু মিউজিক ভিডিও পেয়ে গেলাম। এক এক করে দেখা শুরু করলাম আর
প্রচন্ড স্মৃতিপ্রবণ এই আমি স্মৃতির অতল গহ্বরে ডুবে যেতে লাগলাম…নতুন যারা দেখবেন তাদেরকে একটা কথা আগেই বলে রাখি, ১৫-১৬ বছর আগের বলে প্রায় সবগুলো ভিডিওই লো রেজুলেশন, তাই হাই ডেফিনেশন ইউটিউবে অভ্যস্ত হালের জেনারেশনকে হয়তো কিছুটা হতাশ হতে হবে।
ভারতীয় যেসব ব্যান্ডের গান এবং মিউজিক ভিডিওগুলো প্রবলভাবে আমার কৈশোরকে মনে করিয়ে দেয়ঃ
i) Band: Euphoria – ইউফোরিয়ার
ভিডিওগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ভিডিওতে তাদের ব্যান্ডের পুরো টিমই
পারফর্ম করে। তাদের মিউজিক ভিডিওর সংখ্যা ১৭ টি। আমি এর ভেতর থেকে সুপারহিট
কয়েকটি দিলাম।১) ”ধুম পিচাক ধুমঃ” তাদের প্রথম এ্যালবাম Dhoom এর প্রথম গান। আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো এই গানটা। উল্লেখযোগ্য, এই গানের একটি অংশে বাংলাতে দুটি পংক্তি আছে। একদম খাটিঁ বাংলা ভাষায়। গানের কাহিনী মুটামুটি এরকম-ভারতীয় বংশোদ্ভুত একটা বিদেশী মেয়ে ভারতে বেড়াতে এসেছে। শেষপর্যন্ত সে বিদেশী পোষাক আষাক ফেলে ভারতীয় সংস্কিৃতিকে বরণ করে নেয়।
২) “কিভাবে ভুলবে আমার নামঃ” দারুন মজার এক মিউজিক ভিডিও। ব্যস্ত এক বাসস্ট্যান্ডে কল্পনার জগতে একটা মেয়ের পিছু নেয় ইউফোরিয়া, অথচ মেয়েটা তাদের ভুলতে চায়। কিন্তু কিছুতেই সে ভুলতে পারে না। বারবার মজার মজার রূপে ফিরে আসে তারা।
৩) ’মায়েরি’ – ট্রেন ছুটে চলেছে ভারতের গ্রাম থেকে শহরপানে। সেই ট্রেনে বসে বসে পলাশ সেন মধুর স্মৃতিচারণ করছেন তার প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে…
৪) কাভি আনা তু মেরি গালি – ইউফোরিয়ার আরেকটি হিট। এতে অভিনয় করেছেন বর্তমান কালের জনপ্রিয় বলিউড নায়িকা বিদ্যা বালান। এটা তার ক্যারিয়ারের একেবারের শুরুর দিকে পারফরমেন্স।
ii) Band: Aryans
১) ’চোখের তারায় তোর চেহারাঃ’ এটা যখন এমটিভিতে প্রথম রিলিজ হয় আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। ছেলেটার জাগায় নিজেকে রেখে ভাবতাম, ইস আমার জীবনে যদি এই রকম একটা মেয়ে আসতো, আমিও কি তার প্রেমে এইভাবে পড়তাম? কাহিনী হলো, ছেলেটা মেয়েটাকে ভালবাসে, বেচারা নিজের জমানো টাকা দিয়ে শচীন টেন্ডুলকারের অট্রোগ্রাফওয়ালা ব্যাট না কিনে মেয়েটার জন্য একটা দামী জামা কিনে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, যেদিন মেয়েটাকে জামা দিতে যাবে, সেদিন, তার সামনেই মেয়েটাকে তার বিএফ এনগেজমেন্ট রিং পরিয়ে দেয় (পুরাই বোগাস!)
২) ’দেখেছি তোর চোখের…’ খুবই মিষ্টি প্রেমের একটা মিউজিক ভিডিও। মেয়েটা যতটা না সুন্দরী, ছেলেটা তার চাইতে বেশী হ্যান্ডসাম।
৩) এই বাতাস বলছে কি – শুটিং হয়েছে ভারতের তামিলনাড়ুর কান্ট্রি সাইডে। চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি; চমৎকার ভিডিও।
iii) Band: Bombay Vikings
১) কেয়া সুরুত হ্যায়ঃ সে সময়কার অন্যতম শ্রোতাপ্রিয় ছিলো সাহসী লিরিকওয়ালা এই গান। উঠতি বয়সের তরুনদের প্রথম পছন্দ ছিলো এটা।
২) ও চাল্লি ও চাল্লি বোম্বে ভাইকিংসের সবচাইতে হিট গান এটা।
iv) Rock Singer: Bally Sagoo: (বেলি সাগু)
১) গুড়ে নালো ইসক মিটাওঃ
২) নূরীঃ আধিভৌতিক এক মিউজিক ভিডিও।
iv) Band: Stereo Nation
১) ‘প্রেম হয়ে গেছে’ (খুব সম্ভবত এটা স্টেরিও ন্যাশনের প্রথম গান)
২) সারা রাত নাচবো
v) Rock Singer: Kamal Khan
১) শুনো তো দিওয়ানাঃ আমার খুব খুব পছন্দের একটা গান। সে সময়ে এইটা শুরু হলে সব ফেলে টিভির সামনে বসে যেতাম। ভিডিওর চেয়ে গানটা বেশী ভালো লাগতো। যদিও এর সিনেমাটোগ্রাফি ছিলো এক কথায় অসাধারন!
vi) Various Singers:
১) গায়কঃ হিশাম আব্বাস – নারী না রেঃ গানটি
যদিও মূলতঃ আরবী, তবে শুটিং হয়েছে ভারতের বিভিন্ন লোকেশনে, অভিনয়ও করেছে
ভারতীয় কলাকুশলী। গানের অল্প কিছু অংশ হিন্দী। চমৎকার এর বাজনা।২) ফাল্গুনী পাঠকঃ
ক) ”মেনে পায়েল কি” (খুব সম্ভবত ফাল্গুনীর আত্নঃপ্রকাশ হয় এই গানটির মাধ্যমে)
খ) ’আমার আচঁল উড়ে উড়ে যায়ঃ’ প্রতি রাতে এক কিশোরী মেয়ের ঘরের ছবির ফ্রেমের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে একটা পরী, সারা রাত দুজনে একসাথে গল্প করে, গান গায়, নাচে। পুরোটা সময় মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো একটা মিউজিক ভিডিও!
গ) ’আয়ো রামা হাতসে’
৩) গায়কঃ রাব্বি – ’বুল্লা কি জানে আমি কে?’ শিখ এই লোকের কন্ঠ স্রেফ স্রষ্ঠা প্রদত্ত!
৪) গায়কঃ জুনন – সাইয়োনিঃ এই গানটা যখন রিলিজ হয় তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। সে সময়ে এই গানটা এতটাই জনপ্রিয় ছিলো যে, টানা ২ মাস Ch [V] আর এমটিভির টপ চার্টে ১ নম্বর অবস্থানে ছিলো। আর বিক্রির রেকর্ড ছুয়েঁছিলো মাত্র ৪ সপ্তাহে। তবে তাদের সবচাইতে হিট গান খুব সম্ভবত ‘বন্ধু এটাই তো বন্ধুত্ব’। জুনন পাকিস্থানী। কোক স্টুডিও পাকিস্থানে ধারনকৃত আরো একটা হিট গান হলো গর্জে বর্ষে শ্রাবন – এই গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রগুলো দেখার মতো। বেইজ গিটার থেকে শুরু করে ঢোল-তবলাও আছে।
৫) কন্ঠঃ লাকি আলী – ’কখনো এমন মনে হয় যে’ – চমৎকার একটি মিউজিক ভিডিও, দেখলেই মন ভালো হয়ে যেতো আমার। শুটিং লোকেশন ছিলো পূর্ব ফ্রান্সের ছবির মতো সুন্দর ছোট্ট একটি মফস্বল শহর।
৬) কন্ঠঃ পংকজ উদাস – ‘আউর আহিস্তা কি যে বাতে’ – এটাও মিষ্টি এক প্রেমের গল্প। অষ্ট্রেলিয়ান এক তরুনের সাথে ভারতীয় এক তরুনীর প্রেম। শুটিং হয় সিডনীতে। রিলিজ সালঃ ১৯৯৮। খুব বিখ্যাত গান। পংকজ উদাসের বিশাল একটা শ্রোতা-শ্রেনী আছে ভারতে। উল্লেখ্য, এই ভিডিওতে সামিরা রেড্ডির বয়স থাকে মাত্র ১৬। কিন্তু চরিত্রের প্রয়োজনে তাকে ১৯ বছরের তরুনী হিসেবে দেখানো হয়।
৭) কন্ঠঃ জগজিৎ সিং + আশা ভোসঁলে – ”যখনি তুমি সামনে এসে যাও” – দুই যমজ বোন একই ছেলেকে ভালবাসে, এক বোন আলট্রা মর্ডান, আরেকজন ভারতীয় সনাতন রমনী। এই নিয়ে টানাপোড়েন। কিন্তু কোন বোন জেতে শেষতক? খুব চমৎকার ভিডিও। বিশেষ করে, প্রথম দৃশ্যের দোলনাটা প্রচন্ড মনে ধরেছে। এতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছে বাঙ্গালী অভিনেত্রী ও মডেল রিয়া সেন।
৮) রিমো ফার্নান্দেজঃ ’ও মেরী মুন্নী’ (মিউজিক ভিডিও রিলিজ হয় ১৯৯৮ সালে।) আমার সবার ছোট ভাই আকিহার বয়স তখন দেড় বছর। এই গানটা টিভিতে শুরু হলেই সে উথাল পাতাল নাচানাচি শুরু করতো। এই গান শুনে সে তখন নাচে নাই এইরকম ঘটনা হয় নি। আহিকা এখন নিজেই ক্লাস টেনে পড়ুয়া কিশোর।
৯) সুভা মুডগালঃ এই মহিলার গাওয়া গানের মিউজিক ভিডিও ছাড়া এই পোষ্টা আসলে একেবারেই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আমি তার গায়কী দ্বারা অতি মাত্রায় প্রভাবিত। এত চমৎকার গায়কী, আমার কাছে কেন যেন মনে হয় তার গলার মূল্যায়ন ঠিকভাবে হয়নি। হলে সে আশা ভোসঁলে বা লতা মঙ্গেশকারের সমান মর্যাদা পেতেন। বেশী না, তারঁ দুটো গান শুনেই বোঝা যাবে সেটা – ‘প্রেমের গান শুনে যা’ আর ‘আব কি শাওয়ান’।
১০) গায়কঃ সনু নিগাম – ‘দিওয়ানা তেরা‘ – টাইটেল সং
১১) গায়কঃ সান – তানহা দিল এইটাও গিটারে তুলেছিলাম। ভাললাগা ও মুগ্ধতা সীমা অতিক্রম করলে সেই গানটা আমি গিটারে তুলে ফেলতাম। চাকরী পেয়ে নিজের প্রিয় শহরটাকে ফেলে চলে যেতে হচ্ছে এক তরুনের। পেছনে ফেলে আসে তার প্রিয় বন্ধুদের, ভার্সিটির শিক্ষকদের।
১২) ‘আবকে বারাস।‘ গায়িকা ও অভিনেত্রীঃ সুনিতা রাও।
১৩) রাগেশ্বরী লুম্বা – তৎকালীন ভারতীয় তরুনী গায়িকাদের ভেতর ইনি ছিলেন সবচাইতে সুন্দরী ও আকর্ষনীয় (অত্যাধিক মেদহীন) শরীরের অধিকারীনি।
ক) Y2K – সাই-ফাই ধাচেঁ গড়া এই ভিডিওটি ভারতের প্রথম ডিজিটাল-গ্রাফিক্যাল মিউজিক ভিডিও। এতে যে ১ লাখ লোকওয়ালা স্টেডিয়ামটি দেখা যায়, সেটা পুরোটাই ভার্চুয়াল। বাস্তবে এমন কোন স্টেডিয়াম পৃথিবীর কোথাও নেই। ২০০০ সালকে বরণ করা উপলক্ষে এটি রিলিজ দেয়া হয়।
খ) ’এই পৃথিবীর বড়ই রঙ্গিন’ – রাগেশ্বরীর আরেকটি হিট। মিউজিক ভিডিও রিলিজ হয় ১৯৯৬ সালে। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি।
১৪) আলিসা চিনাই – মেইড ইন ইন্ডিয়া
Vii) Various Artists:
ক) ’তোমার সাথে প্রেম হয়ে গেছেঃ’
ভীষন মজার একটা মিউজিক ভিডিও, গানটাও বেশ চমৎকার। মডেল ছিলো আসলাম ও
শিবানী। এই ভিডিওটা যে ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়তে কত বার দেখেছি, হিসাব নাই
কোন। আহারে! সেই সব দিনগুলা! খ) ” বিন তেরে সানাম”
গ) ”মেরা বাবু ছ্যাল ছ্যাবলা”- চটুল গান। হালকা ১৮+ সুড়সুড়ি আছে গানে। এটা দেখার সময় রিমোটের চ্যানেল পাল্টানোর বাটনে হাত দিয়ে দেখতাম কারন আৎকা আব্বু বা আম্মু চলে আসলে চ্যানেল পাল্টে কার্টুন নেটওয়ার্ক দিয়ে দিতাম।
ঘ) ”কাভি আড় কাভি পাড়” – এটাও চটুল গান। ১৮+ সুড়সুড়ি আছে মারাত্নকরকমের। তাই আব্বু-আম্মু বাসায় থাকা অবস্থায় রিমোট হাতে নিয়াও এইটা দেখার রিস্ক নিতাম না। স্কুলের মেয়ে স্কুল ড্রেস পড়ে নাচতে পারতো অথচ সেটা স্কুল বয়রা দেখতে পারতো না। এই যুগের স্কুলবয়দের মনে হয় এত ভয়াবহ লিংগ বৈষম্য সহ্য করতে হয় না। :/
ঙ) ’কাটা লাগা’ – আরোও একটি ভয়াবহ ১৮+ চটুল গান। লিরিস ও দৃশ্যায়নের সুড়সুড়ি সেই লেভেলের। সেই সময়ের হিট গান এবং হিট ভিডিও!
চ) ’হানি হানি’ – বলিউড হার্টথ্রব সালমান খান অভিনীত সে সময়কার একটি জনপ্রিয় মিউজিক ভিডিও।
ছ) ‘হো পেহলি বার’ – আমার খুবই প্রিয় একটা গান/মিউজিক ভিডিও। এটা যখন রিলিজ হয় তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। Caution: গানের লিরিক খুব এডিকটিভ। সারাক্ষন মাথায় ঘুরতে পারে।
জ) ’আমরা থাকি বা না থাকি আগামীকাল’
ঝ) এ্যালবাম – ইয়ে হ্যা প্রেম – এখানে কয়েকটি মিউজিক ভিডিও আছে। এটা আদতে একটা ধারাবাহিক গল্পের মতো। একদম প্রপোজ করা থেকে শুরু করে ডেটিং ও বিয়ে করাও দেখানো হয়। সে সময়ের হিট।
ঞ) মেহেন্দী কি রাত – ১৯৯৭ তে রিলিজ পাওয়া ওয়েডিং মিউজিক ভিডিও।
viii) Classical Singer: Adnan Sami
আদনান সামীর
কথা তো আর নতুন করে কিছু বলার নাই। এই জেনারেশনের খুব বেশী কেউ তার নাম না
জানলেও আমাদের সময়ে এই লোকের গানগুলো ছিলো রীতিমতো মাষ্টারপিস।
১) “কাভি তো নাজর মিলাওঃ” লিটারেলি আকাশচুম্বি ছিলো এই গানটার জনপ্রিয়তা। এই গানের এ্যালবাম বিক্রির রেকর্ড ভারতের ইতিহাসে অবিস্মরনীয় হয়ে আছে।
২) ভিগি ভিগি রাত মে – তুঙ্গোস্পর্শী জনপ্রিয়তা ছিলো এই গানটিরও। প্রিয়জনের জন্য বুক হু হু করে ওঠা গান।
৩) ’দিল কেহতা হ্যায় দিল সে’ – এই গানে সামীর অসাধারন পিয়ানো শোনা যায়। আমার ধারনা এই তিনটি গানই ছিলো সে সময় তারঁ সবচাইতে হিট গান।
x) ‘কখনো কখনো আমার মনে খেয়াল আসেঃ‘ ভিডিওর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এতে অভিনয় করেছেন (এবং গানেও ভয়েস দিয়েছেন) উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তী অমিতাভ বচ্চন। নারী কন্ঠ ছিলো সাধনা সারগামের। ভিডিওর শেষের কথাগুলো খুব সুন্দর। খুব সম্ভবত, অমিতাভের যুবক বয়সে অভিনীত মুভি থেকে কিয়দংশ নিয়ে এটি বানানো হয়েছিলো। ক্লাস টেনে পড়ার সময় এই গানটা আমার এতটাই প্রিয় ছিলো যে, রাতের বেলা প্রায়ই এটা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তাম। সারা রাত ওয়াকম্যানে বাজতো এই গানটা। এমনকি গিটারেও তুলেছি এটা, তুলে টেপ রেকর্ডারে রেকর্ডও করেছিলাম। সেটা ২০০১ সালে বাসা বদলানোর সময় অনেকগুলো ক্যাসেটের সাথে হারিয়ে গেছে।
xi) একটা পাকি ব্যান্ডের গানও ছোটবেলায় খুব ভালো লাগতো। ফকির মাহমুদের ‘ও দিলরুবা।’ গানটির বৈশিষ্ট্য হলো, এতে স্প্যানিশ ফোক গানের ফ্লেভার আছে। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, আমি মাত্রাতিরিক্ত পাকি-বিদ্বেষী। এখানে আমার ছোটবেলার স্মৃতিজড়িত হিন্দী মিউজিক ভিডিওর লিষ্ট করলাম। নতুবা এই ভিডিওটার কথা কখনই উল্লেখ করতাম না। আরেকটা তথ্য হলো, ৭১ সালে কিছু অফ-স্ট্রিম বাম ঘরানার পাকি রাজনৈতিক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনের প্রকাশ্য বিরোধীতা করেছিলো। ফকির মাহমুদের বাবা জামাল মাহমুদ ছিলেন তাদের একজন।
সবশেষে, এমন একটা গানের লিংক দিলাম, যেটা শুনলে খুশী লাগে না ঠিক, বরং ভীষন মন খারাপ হয়, উদাস হতে ইচ্ছে করেঃ
xii) ‘পিয়া বাসান্তী রেঃ‘ (১ম পর্ব) অসামান্য জনপ্রিয় এই গানটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, কিংবদন্তী গায়ক উস্তাদ সুলতান খানের অসাধারন গায়কী। পুরো গানটাই তাঁর গাওয়া। আর ভিডিওটার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটার ফুল ভার্সন সে সময় এমটিভিতেও দেখাতো না, কিন্তু আমি উপরে যে লিংক দিয়েছি, সেটাতে পুরো ভিডিওটিই আছে।
অত্যন্ত চমৎকার এর সিনেমাটোগ্রাফি। কাশ্মির আর চেরাপুনজির নয়নাভিরাম স্থানে শুটিং হয়। উল্লেখ্য, এই গানের নারী মডেল বিট্রিশ নাগরিক ’নওহীদ সাইরুজি’ ছিলো আমার টিনেজ লাইফের অন্যতম ক্রাশ। এটা ছিলো তার ক্যারিয়ারের প্রথম কাজ। মজার ব্যাপার হলো, এই ভিডিওতে নওহীদকে যতটা কিউট দেখায় ততটা আর কোথাও দেখায়নি।
এগুলা বাদেও
যে নষ্টালজিক মিউজিক ভিডিওগুলো আমার চোখ এড়িয়ে গেছে, সেগুলো কমেন্টের ঘরে
আমার সাখে শেয়ার করতে পারেন। কৃতজ্ঞ থাকবো। আগাম ধন্যবাদ।